ভালোবাসার নাম চিঠি: অরণ্য ও নীলা
ভালোবাসা কি শুধুই দেখা হওয়া, হাত ধরা, কিংবা একসাথে চা খাওয়া? কখনো কখনো ভালোবাসা হয় একদম নীরব, দূর থেকে, বছরের পর বছর ধরে জমতে থাকা অনুভবের মতো। এমনই এক ভালোবাসার গল্প অরণ্য আর নীলার—যাদের প্রেম ছিল চিঠির কালি আর অপেক্ষার শব্দে গাঁথা।
প্রথম পরিচয়: চুপিচুপি শুরু হওয়া
২০০৬ সালের কথা। অরণ্য তখন রাজশাহীর একটি কলেজে পড়ে, আর নীলা ঢাকার একটি মেয়েদের কলেজে। তাদের দেখা হয়েছিল এক আত্মীয়ের বিয়েতে। খুব সাধারণ একটা পরিচয়। কথাও খুব বেশি হয়নি—কেবল দু-একটা বিনীত হাসি আর চোখাচোখি। কিন্তু সেদিন থেকেই অরণ্যর ভিতরে কিছু একটা শুরু হয়েছিল। একটা অদ্ভুত টান, নীলার চোখে ছিল যেন এক ধরনের শান্তির বৃষ্টি।
📸 [ছবি: প্রথম পরিচয়ের মূহূর্ত বা গ্রাম্য বিয়ের দৃশ্য]
চিঠির শুরু: দূরত্বের মধ্যে জন্ম ভালোবাসার
তাদের মোবাইল ছিল না, ছিল না ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ। তাই অরণ্য ঠিক করল, চিঠি লিখবে। প্রথম চিঠিটা ছিল খুব সাধারণ — নাম জিজ্ঞেস করা, ভালো থাকার খোঁজখবর, আর একটু সাহস করে লেখা, “আপনার চোখে খুব শান্তি পাই।”
নীলা উত্তর দিল। তার চিঠি ছিল কবিতার মতো, প্রতিটি বাক্যে ছিল কোমলতা। এই চিঠির যাত্রা চললো একটানা পাঁচ বছর। স্কুলের রেজাল্ট, পরীক্ষার টেনশন, পছন্দের গান, না বলা কথা — সব কিছুই তারা লিখে যেত সেই চিঠিতে।
📸 [ছবি: হাতে লেখা প্রেমপত্র]
সময় বদলায়, মন নয়
কলেজ শেষ, অরণ্য ভর্তি হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নীলা মেডিকেলে চান্স পেল চট্টগ্রামে। ততদিনে তাদের চিঠি কেমন যেন “চিঠি” থেকে কবিতা হয়ে উঠেছে।
নীলা লিখত—
"তুমি যদি আমার শহরে এসে বৃষ্টির দিনে চুপচাপ বসে থাকো, আমি তোমার চা হয়ে যেতে পারি।"
অরণ্য লিখত—
"তুমি আমার নীরবতার গান, তুমি না বললেও আমি শুনতে পাই।"
এই ভালোবাসা একদিনও উচ্চারিত হয়নি ফোনে। তাদের কাছে ভালোবাসা মানে ছিল অপেক্ষা। সত্যিকারের অপেক্ষা।
📸 [ছবি: চিঠি পড়ছে কেউ বৃষ্টির জানালার পাশে]
হঠাৎ থেমে যাওয়া: চিঠির অভিমানে হারিয়ে যাওয়া
একবার অরণ্য চিঠি পায়নি দুই মাস। সে জানত নীলা কখনো ভুলে যাবে না, কিন্তু মন তো অভিমান বোঝে না। সে লিখে শেষ করল শেষ চিঠি —
“তুমি যদি কোনোদিন ফিরেও আসো, আমি হয়তো তখন আর এই ঠিকানায় থাকব না।”
চিঠির কোনো উত্তর এল না। সময় গড়ালো। অরণ্য পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেল। একসময় সে ভাবল, হয়তো এটাই নিয়তি।
📸 [ছবি: খোলা চিঠি পড়ে থাকা টেবিলের উপর]
পুনর্মিলন: বইমেলায় একটি পুরোনো পৃষ্ঠা
২০২০ সালের বইমেলায় অরণ্য একা ঘুরছিল। হঠাৎ সে একটা স্টলে গিয়ে একটা কবিতার বই দেখল—“চিঠির শহরে তুমি”। লেখক—নীলা হায়দার। সে চমকে গেল। বইয়ের প্রথম পাতায় লেখা ছিল—
“এই বই অরণ্যকে উৎসর্গ করা, যাকে আমি কখনো বলতে পারিনি—তুমি আমার সবচেয়ে সুন্দর অপেক্ষা।”
📸 [ছবি: বইমেলার ব্যস্ততা ও একটি কবিতার বই হাতে ধরা দৃশ্য]
অরণ্য মাথা তুলে দেখল—স্টলের পেছনে বসে আছে এক চেনা মুখ, নীল শাড়িতে, চোখে সেই পুরনো শান্তি। অনেক বছর পর, চিঠিরা যেন প্রাণ পেল। কোনো কথা হল না, কেবল চোখে চোখ—আর এক ফোঁটা অশ্রু।
উপসংহার: ভালোবাসা কখনো ফুরায় না
আজ অরণ্য আর নীলা একসাথে থাকে। তারা এখনো চিঠি লেখে, একে অপরকে। শুধু পোস্ট করে না, রেখে দেয় বালিশের নিচে। ভালোবাসা কখনো চিৎকারে নয়, ভালোবাসা বেঁচে থাকে নীরবে, অক্ষরে, অপেক্ষায়।
0 Comments