"তোমার শরীরে আমার সকাল"
১. প্রথম দেখা
রুদ্রর বয়স তেইশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। বই পড়া, গান শোনা, আর ছাদে চুপচাপ আকাশ দেখা—এই ছিল তার জীবন। আর অনিন্দিতা? সে ছিল ঝড়। কলকাতা থেকে ঢাকা এসেছে একটি যৌথ গবেষণায় অংশ নিতে। চোখে চশমা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, আর মাথায় ছাঁটকরা চুল—অন্যরকম এক মেয়ে।
প্রথম দিনেই, লাইব্রেরির কর্নারে বই খুঁজতে গিয়ে রুদ্রর সাথে ধাক্কা লাগে অনিন্দিতার।
— “ওই! দেখেশুনে হাঁটেন না?”
— “আপনিও তো তাকিয়ে ছিলেন বইয়ের দিকে, আমার চোখে তো নয়।”
তাদের এই কথোপকথনের মধ্যে ছিল হালকা খুনসুটি, কিন্তু চোখে চোখ পড়তেই কিছু একটা থমকে গেল। যেন দুজনেই একে অপরকে কোথাও দেখে ফেলেছিল—ভেতর থেকে।
📸 [ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কোণে প্রথম দেখার দৃশ্য]
২. পরিচয়ের পরবর্তী গল্প
পরের কয়েকদিনে রুদ্র আর অনিন্দিতা একসাথে বসে পড়াশোনা করত। মাঝেমধ্যে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে অদৃশ্য অনুভবেরা জমে উঠত।
একদিন বৃষ্টি শুরু হলো হঠাৎ। ছাদে ছিল ওরা। অনিন্দিতা বলল,
— “তুমি জানো, বৃষ্টি ছুঁলেই আমার কেমন যেন ঘুম পায়, আর একা থাকতে ইচ্ছে করে না।”
রুদ্র কিছু বলল না। শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকল। সেই তাকানোয় ছিল এক ধরণের নীরব জিজ্ঞাসা।
📸 [ছবি: ছাদের ধারে বৃষ্টির মাঝে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকা দৃশ্য]
৩. কাছাকাছি আসা
একদিন সন্ধ্যায়, রুদ্রর বাসায় পড়তে আসে অনিন্দিতা। বাসায় কেউ ছিল না। পড়ার মাঝখানে অনিন্দিতা হঠাৎ বলে বসে,
— “তুমি কি কখনো এমন কাউকে দেখেছো, যাকে ছুঁতে ইচ্ছে করে, অথচ জানো না কেন?”
রুদ্রর মুখে লজ্জা মেশানো একটুকরো হাসি। সে ধীরে ধীরে বলে,
— “হ্যাঁ, আমি তোমাকে দেখেছি।”
অনিন্দিতা তার দিকে এগিয়ে আসে। কাঁধে হাত রাখে। সেই মুহূর্তে সময় যেন থেমে যায়। ঘরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কিন্তু তারা দুজনেই জানে—এটা কোন হঠকারী মোহ নয়, এটা অভ্যন্তরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
📸 [ছবি: ঘরের জানালার পাশে দুজন মুখোমুখি বসে আছে]
৪. সম্পর্কের গভীরতা
রুদ্র ও অনিন্দিতা একে অপরকে জানতে থাকে—তাদের পছন্দ, ভয়, অতীতের গল্প, একাকীত্ব। একদিন রাতে রুদ্র জিজ্ঞেস করল,
— “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”
অনিন্দিতা হাসে, তারপর বলে,
— “ভালোবাসা নয়... আমি তোমাতে হারিয়ে যেতে চাই।”
তারা একে অপরের স্পর্শে ধীরে ধীরে মিশে যেতে থাকে। পরিণত, সম্মত, মৃদু আবেগে ভরপুর সম্পর্ক—যেখানে শরীরের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় মন।
📸 [ছবি: বাতির নিচে হাত ধরে বসে থাকা একটি জোড়া]
৫. বিদায়ের ছায়া
অনিন্দিতার গবেষণা শেষ। তার ফিরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। রুদ্র নিরব। অনিন্দিতা তাকে বলে,
— “তুমি জানো, ভালোবাসা মানেই পাশে থাকা না... অনেক সময় দূর থেকেও কেউ কারো হয়ে থাকে।”
রুদ্র বলল,
— “তোমার শরীরে আমার সকাল, আর স্মৃতিতে রাত... তুমি গেলে, আমি বাঁচব—but incomplete।”
📸 [ছবি: ট্রেনের জানালার পাশে একা বসে থাকা একটি মেয়ে]
৬. উপসংহার
আজ ৫ বছর পর, রুদ্র এখন লেখক। তার প্রথম বইয়ের নাম—“তোমার শরীরে আমার সকাল”। বইয়ের উৎসর্গ পাতায় লেখা:
“তাকে, যার চোখে আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম।”
অনিন্দিতা হয়তো দূরে, হয়তো অন্য কারো পাশে। কিন্তু প্রেম? প্রেম রয়ে গেছে… অক্ষরে, মনে, শরীরে—একটা অসম্পূর্ণ অথচ পরিপূর্ণ ভালোবাসা হয়ে।
শেষ লাইন:
ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তবে সে শরীর ছেড়েও থেকে যায়—স্মৃতির প্রতিটি নিঃশ্বাসে।
0 Comments